বুধবার ৫ নভেম্বর ২০২৫ - ০৭:৩০
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.): ঈমান, প্রজ্ঞা ও ন্যায়ের এক চিরন্তন আদর্শ

অল্প সময়ের জীবন হলেও হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.), মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.)-এর প্রিয় কন্যা, আল্লাহর ইবাদত, প্রজ্ঞা ও ন্যায়ের সাধনার এক অনুপম সমন্বয়ের প্রতীক হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে চিরস্থায়ী স্থান অর্জন করেছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মরহুমা মরিয়ম ফালাহাতির রচিত একটি প্রবন্ধে, হযরত যাহরা (সা.আ.)-এর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এই মহান নারীর জীবন ও আদর্শকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.), মহানবী (সা.)-এর কন্যা ও আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)-এর সহধর্মিণী, ইসলামের ইতিহাসে এক বহুমাত্রিক ও অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি আধ্যাত্মিক, পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সচেতন ঈমান, প্রজ্ঞা ও ঐশী দায়িত্ববোধের এক পরিপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

ইতিহাসের পরতে পরতে ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর নাম আলোর ও জ্ঞানের দীপ্তিতে উজ্জ্বল। তাঁর সংক্ষিপ্ত অথচ তাৎপর্যপূর্ণ জীবন আল্লাহর ইবাদত, প্রজ্ঞা ও ন্যায়ের সাধনার এক অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে। যুগান্তকারী পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তিনি দৃঢ় বিশ্বাস, স্পষ্ট দৃষ্টি ও অবিচল সাহস নিয়ে ঐশী সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্বের বহুমাত্রিক দিক অনুধাবন আমাদের জন্য ঈমান, পরিবার, ন্যায়বিচার ও সামাজিক দায়িত্ববোধের মতো চিরন্তন মূল্যবোধগুলোর গভীরতর ব্যাখ্যার এক বিরল সুযোগ এনে দেয়।

ওহির গৃহে বেড়ে ওঠা
তিনি এমন এক ঘরে লালিত-পালিত হন, যেখানে ওহির বাণী প্রতিধ্বনিত হতো, ফেরেশতাদের কণ্ঠস্বর শোনা যেত। তাঁর কাছে ইবাদত কেবল একটি আনুষ্ঠানিক অনুশীলন ছিল না; বরং তা ছিল আল্লাহর সান্নিধ্যে আত্মার গভীরতম আত্মসমর্পণ। তাঁর রাত্রিকালীন নামাজে তিনি নিজের জন্য দোয়া করার আগে সর্বদা অন্যদের জন্য প্রার্থনা করতেন— যা এক আত্মমুক্ত ও পরোপকারী আত্মার প্রতিফলন।

এই ইবাদতচেতনা আমাদের আহ্বান জানায় আত্মিক জাগরণে; এমন এক সচেতন উপাসনার দিকে, যা শুধু শান্তির উৎস নয়, বরং জীবনের পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।

ছোট ঘরে বিশাল দুনিয়া
কন্যা, স্ত্রী ও মাতা হিসেবে হযরত যাহরা (সা.আ.) ছিলেন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও নৈতিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। মদিনায় তাঁর ছোট্ট ও সরল গৃহ ছিল প্রেম, ঈমান ও মানবতার এক বিদ্যালয়। স্বামীর সঙ্গে তাঁর আচরণ ছিল মমত্বপূর্ণ, সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক। আর সন্তানদের লালনপালনে তিনি জ্ঞান, ভালোবাসা ও প্রজ্ঞার সংমিশ্রণে এমন এক প্রজন্ম গড়ে তুলেছিলেন, যারা পরবর্তীতে মানবতার আদর্শে পরিণত হয়।

আজ যখন দ্রুততা, প্রতিযোগিতা ও স্বার্থপরতার যুগে পারিবারিক মূল্যবোধ অনেকাংশে ম্লান হয়ে পড়েছে, তখন হযরত যাহরা (সা.আ.)-এর পারিবারিক জীবন আমাদের আহ্বান জানায় প্রকৃত মানবিকতা, ভালোবাসা ও ঐশী মূল্যবোধে ফিরে যেতে।

মানবতার সেবায় নিবেদিত এক হৃদয়
ইবাদত ও পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি হযরত যাহরা (সা.আ.) দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি গভীরভাবে সংবেদনশীল ছিলেন। তাঁর মানবদৃষ্টি ছিল ঈমাননির্ভর ও ন্যায়নিষ্ঠ। তিনি অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করাকে কোনো দান বা অনুগ্রহ মনে করতেন না; বরং এটিকে তিনি নিজের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখতেন।

তাঁর এই সামাজিক দায়িত্ববোধের উৎস ছিল এমন এক ঈমান, যা মানবসেবার মধ্যেই অর্থ ও পূর্ণতা খুঁজে পায়। তাঁর শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃত ধর্মনিষ্ঠা কেবল ব্যক্তিগত সাধনায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা ন্যায়ের প্রতি উদ্বেগ, মানবিক সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha